বিদেশিদেরকে বন্দর দিয়ে দেশকে ‘আফ্রিকা’ বানানোর অপচেষ্টা হচ্ছে : স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি


চট্টগ্রামের লালদিয়ার চরকে বিদেশি অপারেটরের কাছে কনসেশন চুক্তিতে হস্তান্তর এবং নিউমুরিং টার্মিনাল লিজ–প্রক্রিয়াকে রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে সতর্ক করেছে সার্বভৌমত্ব নিয়ে কাজ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক সংগঠন স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি। 

সংগঠনটি বলছে, ভবিষ্যতে এসব বিদেশি অপারেটর আমাদের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন এবং সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণে পদে পদে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্যে বন্দরগুলো ব্যবহার হতে পারে। সুদানের মতো বন্দর থেকে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদদাতা হয়ে উঠতে পারে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ইশারায় দেশে গৃহযুদ্ধ তৈরির নীল-নকশা তৈরি ও ইন্ধনদাতা হয়ে উঠতে পারে।

তাদের আশঙ্কা, দেশীয় উদ্যোক্তা ও মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বা শ্রমিকে রূপান্তর হবে এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান দেউলিয়াকরণের দিকে যাবে। জব তৈরির নামে আফ্রিকার মতো বিদেশিদের অনুগত এক কামলা শ্রেণিতে পরিণত হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।

তাদের দাবি, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী রেজিমের মত কোনো চুক্তি বা সমঝোতা গোপন করা যাবে না। একইসাথে এপিএম ও মেডলগ এসএর সাথে করা চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের সাথে লিজ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।

রবিবার (২৩ নভেম্বর) বিকেল তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি ও বক্তব্য তুলে ধরে সংগঠনটি। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক মুহিউদ্দিন রাহাত, দপ্তর সদস্য জুবায়েদুল ইসলাম শিহাব, আব্দুল্লাহ আল মাহিন, জাবির বিন মাহবুবসহ আরো অনেক ঢাবি শিক্ষার্থী।

সংবাদ সম্মেলনে এক লিখিত বক্তব্যে মুহম্মদ জিয়াউল হক সাতটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করে বলেন, দেশের অর্থনীতি ও সার্বভৌম নিরাপত্তাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্র ভারত, ইজরায়েল ও আমেরিকার স্বার্থে কাজ করা ডিপি ওয়ার্ল্ড ও এপিএম টার্মিনালসের কাছে বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর কনসেশন বা ইজারায় দেওয়া মারাত্মক রকমের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। ভবিষ্যতে এসব বিদেশি অপারেটর সুযোগ বুঝে দেশের মানচিত্র পরিবর্তনেরও দুঃসাহসও দেখাতে পারে। এছাড়া সামরিক-অর্থনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তি, দেশের স্পর্শকাতর তথ্য ভারত, ইজরায়েল তথা বিদেশিদের কাছে পাচার করা এবং দেশের ক্রান্তিকালে চট্টগ্রাম বন্দর নামক রাষ্ট্রের টুঁটি চেপে ধরে বৈদেশিক আনুগত্যে বাধ্য করার মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে বিদেশি অপারেটরগুলো।

তিনি বলেন, ৯০ ভাগ আমদানি-রপ্তানিরর কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে দেশের প্রতিটি নাগরিকের দৈনন্দিন জীবনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বন্দর বিদেশিদের হাতে চলে গেলে আমদানি-রপ্তানি থেকে আসা অর্থের বড় একটা অংশ বিদেশে চলে যাবে, যেটা এতদিন দেশের রিজার্ভে যোগ হতো। তাদের মাধ্যমে দেশীয় বা স্থানীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের উপর একের পর এক বৈদেশিক আধিপত্য ও আঘাত আসতে থাকবে। এসব বৈদেশিকদের আগমনের কারণে চট্টগ্রাম এলাকায় ‘ন-ডরাই’ সিনেমায় কল্পিত হোটেল পতিতাবৃত্তির মতো অসামাজিক কার্যকলাপ ব্যাপকভাবে বাড়বে।

জিয়াউল হকের ভাষ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামের বন্দরগুলোর প্রসঙ্গ টেনে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়, অথচ ‘সিঙ্গাপুর বন্দর’ এর ৩টি কন্টেইনার টার্মিনালের সবগুলো সিঙ্গাপুর নিজেই অপারেট করে। তাদের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থে সিঙ্গাপুর পোর্টের একটি কন্টেইনার টার্মিনালও বিদেশিদের হাতে দেওয়া হয়নি। ভিয়েতনামের প্রায় ২৭০টি বন্দরের (সমুদ্র বন্দর প্রায় ৪৫টি) প্রায় সবগুলো তারা নিজেরাই অপারেট করে। দুর্নীতি ও সক্ষমতা বাড়ানোর নামে বন্দর বিদেশিদের দেয়া হাস্যকর এবং অগ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশের প্রায় সব সেক্টরেই দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তাহলে শুধু বন্দরের পেছনে লাগার রহস্য কী?

বন্দর বিদেশিদের হাতে দিলে ভারত ও ইজরায়েল লাভবান হবে দাবি করে জিয়াউল হক বলেন, আইটুইউটু বা ইন্ডিয়া, ইজরায়েল, আরব আমিরাত ও আমেরিকার মধ্যে হওয়া ইন্দো-আব্রাহামিক চুক্তি ও আইমেক করিডোর কনসেপ্ট থাকায় বাংলাদেশের বন্দর ডিপি ওয়ার্ল্ড কিংবা এপিএম টার্মিনালসের হাতে লিজ দিলে ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, লাভবান হবে ভারত ও ইজরায়েল। বাংলাদেশ কোনো ‘কিংডম নয়। বাংলাদেশ একটি রিপাবলিক। সেই সেন্সে বন্দরের মালিক সরকার নয়। সামষ্টিকভাবে এটি জনগণের সম্পদ। অতএব, জনগণের অভিপ্রায় ছাড়া কিংবা অস্বচ্ছ ও কোনো গোপন চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির আহ্বায়ক আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক হৃৎস্পন্দন। এই সম্পদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে কোনো অস্বচ্ছ সিদ্ধান্ত জাতির ভবিষ্যৎকে ঝুঁকিতে ফেলবে নিশ্চিত। জাতীয় স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে আপসের সুযোগ নেই। অতএব, বিদেশিদের সাথে চুক্তি জনগণের নিকট খোলাসা করতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী রেজিমের মত কোনো চুক্তি বা সমঝোতা গোপন করা যাবে না। একইসাথে এপিএম ও মেডলগ এসএর সাথে করা চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের সাথে লিজ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url